আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর, বরকত ও পুণ্যময় রজনী

আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী। ‘হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’ পবিত্র লাইলাতুল কদর সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন লাইলাতুল কদরে নাযিল হয়। এটি কোরআন নাজিলের রাত। বিশ্বমানবতার দিশারি হয়ে এ রাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, হেদায়েতের বাণী নিয়ে দুনিয়ায় আসেন ফেরেশতাকুলের সর্দার হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম।

‘শবে কদর’ ফার্সি শব্দ। শব অর্থ রাত এবং কদর মানে ভাগ্য, সম্মান, মর্যাদা, সুমহান ইত্যাদি। শবে কদরের পূর্ণ অর্থ হলো ভাগ্য রজনী। যেহেতু এই রাতে আমাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, তাই একে ভাগ্য রজনী বলে। আরবিতে বলে লাইলাতুল কদর তথা মহিমান্বিত রাত।

আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ, “নিশ্চয়ই আমি একে বরকতময় রজনীতে নাজিল করেছি” (সুরা: দুখান, আয়াত: ৩)।

পবিত্র কালামে পাকে আল্লাহ তা’আলার এরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমান্বিত কদর রজনী কি? কদর রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম” (সুরা: কদর, আয়াত: ১-৩)।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে বিশ্বমানবতার দিশারি ও হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে” (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। মুসলিম উম্মাহ’র কাছে শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক।

রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করো” (মুসলিম)। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯। এই পাঁচটি রাতের যেকোন একটিতে শবে কদরের উপস্থিতি হলেও এর সুনির্দিষ্ট কোন তারিখ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ করে যাননি। বরং শেষ দশদিনে ইতিকাফ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যাতে অনায়াসেই কোন বান্দা এই রাত পেতে পারে, এমতাবস্থায় সে ইতিকাফকারী কিংবা ইবাদতে ব্রত থাকে।

তবে সাহাবায়ে কিরাম হতে বর্ণিত অসংখ্য রেওয়ায়েত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে রমজানের ২৭ তম রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি উল্লেখ করে মত দিয়েছেন অধিকাংশ ওলামায়ে কিরাম। এক্ষেত্রে ইমামে আজম আবু হানিফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সুন্দর একটি যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘যেহেতু আরবিতে লাইলাতুল কদর শব্দটি ৯ হরফ বা অক্ষরযোগে গঠিত। আর এই শব্দটিই সূরা কদরে এসেছে সর্বমোট ৩ বার। গাণিতিক হিসাবে ৯ আর ৩ গুণ করলে ফলাফল আসে ২৭। তাই এই রাতটি ২৭ তারিখে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল’।

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যময় পরিবেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালন করবে। উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

এ দিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় (বাদ যোহর) বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে ওয়াজ করবেন রাজধানীর মিরপুরস্থ বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা আবদুল মুকিত আল আজহারী।